১ম দিন -
আমরা ৫ বন্ধু ১৭ তারিখ সকালে সেইন্ট মার্টিন যাওয়ার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার থেকে টেকনাফের জন্য রওনা দেই। সকাল ১০ টার দিকে ট্রলার ছাড়ে তাই সকাল ৭ টার দিকে কক্সবাজার এর ডলফিন মোড় থেকে ১০০০ টাকায় সি এন জি নিয়ে মেরিন ড্রাইভ হয়ে রওনা দেই।
মাঝে রয়েল টিউলিপ বিচ এর এখানে থামি হালকা নাস্তা করার জন্য। এরপর ৯ টার দিকে পৌঁছে যাই একদম টেকনাফ ট্রলার ঘাট। সেখান থেকে ২২০ টাকায় জন প্রতি ট্রলার এর টিকেট কেটে আমরা বাজার থেকে ছাতা আর গামছা কিনে নেই।
এক্ষেত্রে ট্রলারে সাড়ে ৯ টার দিকে লোক উঠানো শুরু করলে আগে আগে উঠে ভালো জায়গায় বসে নিলে বেটার। আমরা ১০ টায় ট্রলার ছাড়ার কথা থাকায় ৯.৫৫ এ এসে দেখি ট্রলার ছেড়ে দিসে। লাকিলি ২য় ট্রলার ছিলো ১২ টায়। নাহলে হয়ত সেইন্ট মার্টিন যাওয়া হতো না।
অনেকদিন ২য় ট্রলার থাকে না। একটা ট্রলারই ছাড়ে। তাই সকালের প্রথম ট্রলারে যাওয়াই সেফ অপশন।
এরপর কোস্ট গার্ডের একটা ফর্মাল চেক এর পর শুরু হয় যাত্রা। নাফ নদীতে মায়ানমারের বর্ডার ঘেষে চলতে চলতে যেন একটু অন্যরকমই লাগছিলো। একটু পর যখন বৃষ্টি নামে তখন অনেকেই ট্রলারে বৃষ্টিবিলাসে মেতে উঠে।
১ ঘন্টা পর আমাদের ট্রলার সমুদ্রে। সাগরের ঢেউ ট্রলারের গায়ে লাগার অনুভূতি স্পষ্ট। মাঝে মাঝে কয়েকটা ঢেউয়ে সবাই চিল্লায় উঠলেও আবহাওয়া সুন্দর পাওয়ায় তুলনামূলক শান্তই পাই আমরা সাগর।
সাগরে রোদের তাপ ভয়াবহ। তাই ছাতা অথবা গামছা ছাড়া টিকে থাকতে পারলে তার ত্বক নিয়ে রিসার্চারদের গবেষণা করা দরকার।
দুই ঘন্টা পর সেইন্ট মার্টিন জেটি ঘাটে পৌঁছাই আমরা। দ্বীপে পা রাখতেই কেমন যেন একটা যুদ্ধ জয়ের ফিল আসলো।
এরপর ২০০ টাকায় একটা ভ্যান নিয়ে চলে যাই অবকাশ রিসোর্টের কাছে। সেখানে রুম ফাঁকা না পাওয়ায় ওাশের হেরিটেজ রিসোর্টে উঠি। আর বলতেই হবে, ১২০০ টাকায় ৫ জনের জন্য বিচ সাইড রিসোর্টে ডাবল বেড এর রুম পেয়ে ব্যাপারটা ভালোই হয়েছিল।
বিচে ওদের হেমক আর ওয়াচ টাওয়ারে বসে সাগর দেখে ঐদিন বিকেল পার করতে থাকি।
মাঝে খাওয়া সেড়ে নেই রিসোর্ট থেকেই। ওদের নিজস্ব ডাইনিং আউটডোরে। খাবার প্যাকেজ সিস্টেম। ভাত ডাল ভর্তা সবজি আর যেকোন এক পিস মাছ অথবা মুরগি এক পিস ১৮০/-
খাবার আর সার্ভিস ভালোই ছিলো।
আলাদা এক্সট্রা মাছ নেওয়া যায় ১০০/৮০/৭০ টাকায়।
সূর্যাস্তের সময় বৃষ্টি নামা শুরু করে আর আমরা ফুটবল নিয়ে বিচে নেমে পড়ি। আকাশে তখন মেঘের উড়াউড়ি। সূর্য যখন একদম দিগন্তে, তখন চারপাশটা যেন লাল স্বর্গে পরিণত হলো। দুইবার সেইন্ট মার্টিন গেলেও এরকম অসম্ভব সুন্দর রূপ দেখি নাই। তারপর রাতে আসে ভরা জোয়ার। একদম রিসোর্টের ভেতর পানি চলে আসার মতো অবস্থা। সেসময় ওয়াচ টাওয়ারে বসে সময় কাটাতে বেশ ভালোই লাগছিলো।
রাতে যাই বাজারে ডিনার করতে। ১০০ টাকায় রূপচাঁদা মাছ, ৫০ টাকায় কাকড়া আর দুইটা পরোটা দিয়ে বেশ আত্মতৃপ্তির একটা খাওয়া শেষে জেটি ঘাটে গিয়ে কিছুটা সময় কাটাই। তারপর রিসোর্টে ব্যাক করে সাগরের গর্জন শুনতে শুনতে ঘুম। পরদিন সকালে সাইকেল নিয়ে বের হওয়ার জন্য উঠি। কিন্তু শরতে যে সকালে ভরা জোয়ার থাকে তা ঐ প্রথম দেখলাম। তাই ওয়াচ টাওয়ারে বসে ব্লু টুথ স্পিকারে গান শুনতে থাকি।
১২ টার পর জোয়ার কমলে ফুটবল নিয়ে চলে যাই বিচে। লোকালদের সাথে খেলে নাকানি চুবানি অবস্থা। বল তো নেয়াই যায় না। উল্টা নিতে গেলে ময়ূরের মতো নাচায় ছাড়ে। সেখানে খেলা শেষে সাগরে গোসল সেড়ে রিসোর্টে ব্যাক। দুপুরে প্যাকেজের মাছ ভাত খেয়ে রেস্ট নিয়ে বিকেলে সাইকেলের পালা।
সাগরপাড়ে সাইকেল চালানো সবসময়ই একটু অন্যরকম। একপাশে সাগর রেখে সমান্তরালে চলার একটা আলাদা অনুভূতি। যদিও ভেজা বালুতে চালাইতে গেলে ১০ মিনিটেই কাহিল পুরা।
সাইকেল চালাতে চালাতে সূর্যের অস্ত যাওয়া। ঐদিন সন্ধ্যার পরই আকাশে মেঘের ডাকাডাকি। রাত ৮ টার দিকের বিশাল বিশাল বজ্রপাতের শব্দে প্রায় সবাই ভয় পেয়ে যার যার রুমে ব্যাক। এদিকে আমাদের ৫ হাজার টাকায় কোরাল মাছ বিবিকিউ হবে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা ।
পরে ৯ টার পর অবস্থা ভালো হলে শুরু হয় বিবিকিউ।
ঐদিন নাকি বাজারে একটাই বড় কোরাল উঠে।আমাদের ঐটার অফার দেয়া হয়। আমরা লেজের দিকের ২ কেজির বি বি কিউ করে দিতে বলি ২ হাজার থাকায়। সাথে আরো দুইজনকে নিয়ে ৭ জনে মিলে সেই বিশাল কোরাল মাছ খাওয়া শুরু করি রাতে। ২ হাজার টাকায় ৭ জনের মাছ, ৩/৪ পিস পরোটা, সস, সালাদ, কোকাকোলা ২৫০ মিলি ছিলো জনপ্রতি।
পেট ভরে খেয়েও শেষ হচ্ছিলো না খাওয়া। সো কোনরকম শেষ করে আমরা ঐদিন কিছু সময় বিচে কাটিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ি। পরদিন সকালে ১০ টায় টেকনাফ ব্যাক করার ট্রলার। সকাল সকাল উঠে সব গুছিয়ে চলে যাই জেটি ঘাট। সেখান থেকে ট্রলারে উঠে আড়াই ঘন্টা পর টেকনাফ পৌঁছানোর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় আমাদের শরতের সেইন্ট মার্টিন বিলাস।
ট্রলার ভাড়া - জন প্রতি ২২০/- ( যাওয়া আসা ৪৪০/- )
ভ্যান ভাড়া - ২০০ টাকা যাওয়া + ১৫০ টাকা আসা ( ৫ জনের জন্য )
রিসোর্ট - ১২০০ টাকা ৫ জনের জন্য
খাওয়া - রিসোর্টে ১৮০/- জন প্রতি।
আমাদের টেকনাফ থেকে সেইন্ট মার্টিন ঘুরে এসে আবার টেকনাফে ব্যাক করতে খরচ হয় ২০০০/- টাকা জনপ্রতি।
ঢাকা থেকে যাওয়া আসা বাস ভাড়া সহ সব মিলায়ে আরো ২০০০/- খরচ হওয়া উচিত।
সব মিলায়ে ৪০০০/- জন প্রতি দুই রাত দুই দিন।