Sikkim Darjeeling Tour 

Sikkim Darjeeling 6 Night 7 Days Full Trip Details & Cost

Written by - Asif Himel

 

বছর শেষে বরফের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে পাঁচ স্কুল বন্ধু পাড়ি জমালাম ভারতের সিকিম রাজ্যে। ভিসার ঝামেলা শেষে ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা হয়ে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে আড়াই হাজার রুপিতে জীপ নিয়ে রওনা দিলাম সিকিমের গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে। তিস্তার নিল পানি আর পাহাড়ের আঁকা বাকা পথের দৃশ্যে চোখ জুড়াতে জুড়াতে চলছিলাম আমরা। ব্লুটুথ স্পিকারে হাল্কা মেলডির গান ছেড়ে দিয়ে থ্রি ইডিয়টস মুভির লাদাখ যাওয়ার ফিল নিতে নিতে রাত সাড়ে সাঁতটার দিকে পৌছে গেলাম গ্যাংটকে। গ্যংটকের এম.জি. রোডে আসতেই মনে হলো ইউরোপের কোন এক শহরে এসে পড়েছি।
মোজাইক পাতা রাস্তা আর দুপাশে সারি সারি বেঞ্চ আর দোকান দেখে আমরা ১০০০ রুপির হোটেল রুম নিয়ে শেষ করি আমাদের প্রথম দিন। 

পরদিন দেখা হবে গ্যাংটক শহর ঘুরে। ঠিক হলো জিপ আর সাইটসিয়িং এর স্পটগুলো। খরচ সারাদিনে ২৫০০ রুপি। সকালের Mg Marg এবং আশপাশটা দেখে বেরিয়ে পড়ি। আর নাস্তার পর্বটা সেরে নিই রুটি আর গরুর গোশত দিয়ে আসলাম বিরিয়ানি থেকে।


প্রথম স্পটটা কাছেই ছিল। গ্যাংটক শহরের পুরোনো একটি মন্দির। উত্তর পূর্ব ভারতের বিশেষত্ব হলো তাদের সুন্দর কারুকার্যখচিত উপসনালয়গুলো।
দ্বিতীয় স্পট আরেকটি মন্দির। তবে পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় সেখান থেকে পুরো গ্যাংটক শহরটি দেখা যায়। আর দূরে চোখে পড়ে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা। পাঁচ-ছয় ডিগ্রির হাড় কাপাঁনো বাতাসে মেঘের আড়াল হতে সূর্যের আলো পাহাড়ের গায়ে রঙ মাখতে দেখার দৃশ্যটা মন্দ ছিল না।


এরপর চিড়িয়াখানা দেখার পালা। সাফারি পার্কের মতো অনেক প্রাকৃতিক বাসস্থানে রাখার চেষ্টা করা হয় প্রাণীগুলোকে। পাহাড়ি সব প্রাণীদের হিমালায়ান চিতাবাঘ দেখে বেশ ভালো লাগে। রাস্তায় উত্তর ভারতের জনপ্রিয় খাবার চিকেন মম খেয়ে হালকা ভাবেই সেরে ফেলি দুপুরের ভোজন।
বিকেলে তাশি ভিউ পয়েন্টে ছবি তোলার সেশন আর পাহাড়ি বাতাস গায়ে লাগাতে লাগাতে শেষ করি ঐদিনের সাইটসিয়িং।
রাতে আবার হাজির আসলাম বিরিয়ানিতে। এবার আসলাম ভাইয়ের হাতের বাসমতী চালের বিফ বিরিয়ানি খেয়ে এক নিমেষেই ভুলে যাই সারাদিনের সব ক্লান্তি।

এরপর তৃতীয় দিন। দর্শন স্থান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উঁচু লেক "চাঙ্গু" লেক। ৩০০০ রূপির মাহেন্দ্র বলেরো জিপে করে রওনা দিলাম ১২,৩০০ ফিট উচ্চতার লেকের উদ্দেশ্যে। প্রথম প্রথম পাহাড়ের গায়ে সাদা বরফের স্তূপ দেখে মনের ভেতর একটা আলাদা উত্তেজনা কাজ করে।


আঁকাবাকা পাহাড়ের পথে চলতে চলতে পৌঁছে যাই চাঙ্গু লেকে। জীবনে প্রথম এতো বরফ আর 'ইয়াক' গরু দেখে তাড়াতাড়ি নেমে পড়ি গাড়ি থেকে। প্রথম দিকে সূর্যের একটুখানি দেখা মিললেও পরে চারপাশটা পাহাড়ি মেঘে ঢেকে যায়। এরপর কনকনে ঠান্ডায় নিজেদের কিছুটা মানিয়ে নিয়ে নেমে পড়ি বরফ উল্লাসে। হুমায়ুন আহমেদের বৃষ্টিবিলাস উপন্যাসের মতো এই মুহূর্তগুলোর নাম বরফ বিলাস দিতে ইচ্ছে হলো।


এবার ফেরার পালা। ফিরতে ফিরতে গাড়িতে বসে জমে যাওয়া হাত পায়ে যেন আবার অনুভূতি ফিরে পাই। রাতে গ্যাংটক শহরের ডমিনোজে পিজ্জা খেয়ে শেষ হয় আমাদের সিকিম পর্ব।

চতুর্থ দিন। সিকিম টু দার্জিলিং। ২৫০০ রূপিতে জিপ ভাড়া করে রওনা দিলাম চায়ের দেশে। উঁচু নিচু রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম টয় ট্রেনের রাজধানীতে। সন্ধ্যায় পৌঁছে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার উদ্দেশ্যে দর কষাকষি করে পাঁচ জনের জন্য একটি বড় রুম নিয়ে নেই। রাতে দার্জিলিং শহরেটা ঘুরে দেখে বাঙালী হোটেল থেকে রুই মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে সেরে নেই ডিনার। বেশ কয়েকদিন পর মাছ খেয়ে একটু বেশিই ভালো লেগেছিল। 

পরদিন সকাল বিখ্যাত দার্জিলিং ক্লক টাওয়ারের পাশে নাস্তা করে বের হয়ে পড়লাম আগের দিন ঠিক করা দার্জিলিং সাইটসিয়িং এর প্যাকেজের জিও নিয়ে। এবারও খরচ ২৫০০ রূপি।
চা বাগান দেখতে দেখতে ঠিক হলে ক্যাবল কারে উঠা হবে। লম্বা লাইন শেষে ক্যাবল কারে উঠতেই মুগ্ধতায় মন ভরে গেলো। সবুজ চায়ের বাগানের মনোরম দৃশ্যে চোখ জুড়িয় যায়।


ক্যাবল কার শেষে আমরা দার্জিলিং চিড়িয়াখানা আর 'ঘুম' উপাসনালয় ঘুরে দেখি আর ঐদিনের মতো শেষ হয় আমাদের সাইটসিয়িং। পাহাড়ি এলাকায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি দেখার সুযোগ হয় আমাদের। অত্যন্ত ভদ্র এবং মার্জিত স্বভাবের পাহাড়ি মানুষের সাথে আরো কয়েকটা দিন সময় কাটানোর খুব ইচ্ছে থাকলেও পরদিন ফিরতে হয় আমাদের।


শিলিগুড়ি আসতে আসতে অবচেতন মনে ভাবছিলাম আবার কবে আসতে পারবো এই পাহাড়ি রাজ্যে। শিলিগুড়ি পৌঁছে দুপুর দেড়টায় ঢাকার বাসে উঠে পড়ি। শেষ হয় এমন একটি ভ্রমণের যার প্রায় সবগুলো মুহুর্ত এখনও ভেসে উঠে মনের ক্যানভাসে।

Thanks for Reading. Checkout my YouTube Channel from the Link Given Below

যাওয়া আসা সহ ডিটেইলস ভিডিও  

 

See More